ভারতের সর্ব পশ্চিম অংশ তথা গুজরাট অঞ্চলের Kutch বিভাগের Bhuj জেলার Mundra শহর থেকে Kutch বিভাগ ভ্রমণে বের হয়েছি মার্চের ১৪ তারিখ দুপুর ২টায়। একটা প্রাইভেট কার ভাড়া করেছি অল্প সময়ে পরিচিত হওয়া এক দোকানদারের মাধ্যেমে (হোটেলওয়ালাদের দিয়ে করালে কমিশন সহ ৮ এর কমে পাওয়া যাচ্ছিল না), প্রতি কিমি ৭ রুপি করে। মোটামুটি শেষ ৩ দিন ধরে গুগল এবং স্থানীয়দের সাহায্যে সম্ভাব্য গন্তব্য ঠিক করে রেখেছি। প্রথম স্থান নির্ধারণ করেছি হোয়াইট ডেজার্ট বা সাদা মরুভূমিকে। পথিমধ্যে ভুজ শহরে একটা মন্দির দেখে যাওয়ার প্ল্যান করেছি।
গাড়ি কিছুদূর যেতেই ড্রাইভার কাছুমাছু করে বলল, স্যার একটা কথা বলব, যদি কিছু মনে না করেন। বললাম, নির্দিধায় বল।
সে বলল, হোটেলের নীচে আপনাকে প্রথম দেখায় মনে করেছিলাম, আপনি হোটেলের স্টাফ। আপনিই যে গেস্ট সেটা ভাবতে পারিনি।
জিজ্ঞাস করলাম, এই ভাবনার কারণ কি?
সে বলল, সাধারণত গেস্টরা হয় সব বয়স্ক লোক, আর আমাকে বলা হয়েছিল গেস্ট বাংলাদেশী। বাংলাদেশী মানুষ আগে কখনো দেখি নি, তাঁর উপর আপনি আমার সাথে হিন্দীতে কথা বলছেন এবং আপনার চেহারা চুরত এতই কম বয়স্ক লেগেছে, মনে করেছিলাম হোটেলের ম্যানেজারকে গেস্ট গাড়ি ঠিক করার জন্য পাঠিয়েছে।
আমি হাসতে হাসতে বললাম, তোমার নাম কি?
–ইউসুফ
শুনে ভাল লাগল। যাক, অন্তত আগামী দুই দিন খাওয়া নিয়ে তেমন সমস্যা হবে না।
ভেবেছিলাম, মন্দিরটা হয়তো নরমাল একটাই হবে, অন্যগুলি দেখতে যেমন। কিন্তু দুপুরের কড়া রোদে কেল্লাসম গেইট দিয়ে ঢুকে বিশাল গ্রাউন্ড সহকারে সাদা মন্দিরের অবয়ব দেখে থমকে গেলাম।
আরো অবাক হতে হলো মন্দিরে প্রবেশ করে। পুরো মন্দিরই ইতালিয়ান সাদা পাথরে নির্মিত! এই মন্দির নির্মাণে কত শত কোটি টাকা খরচ হয়েছে, সেটা জানাও একটা আমেরিকা আবিষ্কারের ন্যায় ঘটনা হতে পারে!
যেহেতু আমি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর শিক্ষার্থী, সেহেতু স্ট্রাকচার, ডিজাইন, কনস্ট্রাকশন এবং পাথরে খোঁদাইকৃত নকশা আমাকে ভাবিয়ে তুলল! কিভাবে সম্ভব, এত নিখুঁত, সূক্ষ নকশা খোঁদাই! কত লক্ষ শ্রমিকের, কত বছরের, কত শ্রমের সাধনা এই মহান অবয়ব!
পাথরের প্রতিটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ বিভিন্ন মূর্তি, নকশা এবং ডিজাইনে এ্যামবুশ এবং খোঁদাই করে অঙ্কিত। মূল স্টাকচারের সাথে গেইটের ডান পাশে দ্বিতল পুরুষ আবাসন, বাম পাশে আলাদা গেইটসহ নারী আবাসন, মন্দিরের সমান্তরালে ৫০ হাজার মানুষের জন্য অডিটরিয়াম এবং পাশে লাগানো সমৃদ্ধ জাদুঘর। জাদুঘরে শত শত বছর আগের বিভিন্ন মুদ্রা থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ দলিলাদি স্থান পেয়েছে। শিক্ষার জন্য এই জাদুঘরটি অসাধারণ ভূমিকা রেখেছে বলে আমার বিশ্বাস।
মন্দিরটির নাম Swaminarayan Temple, যা স্থানীয়ভাবে ভুজ মন্দির নামেই পরিচিত। হাজার হাজার দর্শনার্থী এবং পূজারীর পদভারে চঞ্চল এই ধর্মীয় স্থাপনাটিতে একমাত্র শব্দ পায়রার বাকবাকুম বাকবাকুম, আর কোন শব্দই নেই!
প্রাঙ্গণ ছেড়ে আসতে আসতে ভাবছিলাম, আমাদের দেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বী বন্ধু, পরিচিত শুভাকাঙ্ক্ষীরা যদি এই মন্দির একবার দেখে যেত, অন্তত জীবন সায়াহ্নে মধুর স্মৃতি হয়েই অমর ভাস্কর রয়ে যেত।
অতঃপর আধুনিক কন্সট্রাকশন জগতের এক নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে আমিও অপর সূধা সাদা মরুভূমি পানে ছুটে চললাম ঘন্টায় ১৩০ কিমি বেগে…………….