In to the Phi Phi island, Thailand.

এমন এক আজব দেশে এসেছি, যেখানে সকলেই হুদাই বরফ খায়। নাস্তা করছেন বসে, পাশেই দেখবেন একজন এসে অর্ডার করল গ্লাস ভর্তি বরফ কুচি, স্ট্র দিয়ে খায়। এমনকি তারা ডাব পর্যন্ত ডিপ ফ্রিজে রেখে খায়। এমন অদ্ভুত বরফখোর, ঠান্ডাখোর মানুষ ইহজীবনে কম দেখেছি।
গতকালের বৈরী আবহাওয়া পাড়ি দিয়ে আন্দামানের বিশাল বুকের আইল্যান্ডে এসেছিলাম, যার আশেপাশের ছোট ছোট আইল্যান্ডগুলো হলিউড স্টারদের পার্সোনাল সম্পত্তি। একেকজন একেকটা আইল্যান্ড খরিদ করে ভিলা, পুল সহ আধুনিক সব প্রযুক্তি ফিট করে রেখেছে, হলিডে কাটাতে এখানে চলে আসে।
আমার জন্য সবচেয়ে সুখকর ছিল এ কারণে, এই আইল্যান্ডে কোন শূকর নাই। এমনকি পৃথিবীর বিখ্যাত এই দ্বীপের ৮০% জনসংখ্যা মুসলমান, যদিও জনসংখ্যা মাত্র ৪ হাজার। খাবার পাচ্ছি নিশ্চিন্তে।
সমস্ত শহরে কোন নয়েজ নেই, এক কণা ধূলা নেই। এই দ্বীপের বসতির পর থেকে কোনদিন চুরি, ছিনতাই হয়েছে এমন রেকর্ড নেই। সাগরের নির্দিষ্ট পর্যন্ত সিকিউরিটি দিয়েছে প্লাস্টিক বেরিয়ার দিয়ে। ভেসে যাওয়ার সুযোগ নেই। দ্বীপে কোন দালাল নেই। যে সেবার জন্য যে টাকা দেবেন, তার চেয়ে বেশি সেবা পাবেন।
২৪ ঘন্টা এয়ার টাইট বক্সে করে আবর্জনা ক্লিন করে নিয়ে যাচ্ছে ক্লিনাররা। সেই আবর্জনা এবং ডাস্ট ওয়াটার রিসাইক্লিং করার জন্য দ্বীপেই রয়েছে প্লান্ট।
আজকে সকালে আবার পাড়ি দিচ্ছি আন্দামান সাগর, যদিও সূর্য মামা উদিত হয়েছে এবং ভয়াবহ তেজ দিচ্ছে। ফলে পানি পিউর গ্রিন অথবা পিউর ব্লু।
প্রথমদিনের ভয়াবহ রাত পার করার অভিজ্ঞতায় ভয়ে পরের শহরে পরদিন রুম নিয়েছিলাম একলা, ডাবল রুম। রুম ভাড়া ছিল ১৫০০ টাকা৷ আমি হলফ করে বলতে পারি, আমাদের পর্যটন শহর ককসবাজারে ১ লাখ টাকা দিয়েও এত চমৎকার আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন রুম পাওয়া যাবে না।
এত বিশাল রুম, ঘুরতে গিয়ে ঘুমানোর সময় নেই, এতগুলো টাকা চলে গেল, এই দুঃখে গতরাতে ছিলাম আবার ডরমিটরিতে। বাংকার সিস্টেম, দ্বিতল মিলে ২০ সিট। যতটুকু দেখেছি ৭০% নারী গেস্ট।
কিন্তু বাথরুমে ঢুকে মাথা নস্ট। ছোট ছোট তিনটা টয়লেট কাম শাওয়ার রুম। অসম্ভব ক্লিন, হট ওয়াটার, সব ঠিক আছে কিন্তু সমস্যা হচ্ছে দরজা। দরজাগুলোর ছিটকিনি মেয়েদের চুলের ক্লিপের চেয়ে ছোট, আর দুই পার্টের টিস্যু পেপারের মত পাতলা দরজাটা যতভাবেই বন্ধ করুন না কেন, ফাঁক থাকেই। আর দরজার দুই পার্টের সাইডটাও দুই ইঞ্চি মত ফাঁকা। যেহেতু কমন বাথরুম, ২৪ আওয়ার এসি চলে, লাইট জ্বলে।
প্রথম ধাক্কায় ঢুকে বসার পর আমার পিঠ বেয়ে শীতল একটা স্রোতধারা বয়ে গেল। কারণ আমার সামনা সামনে যে বসেছে সে আমাকে দেখছে, আমার কোনাকুনি যেটা আছে, তাকেও আমি দেখছি। আর কি বাথরুম হয়? কোনমতে পালিয়ে বের হলাম। কিন্তু সন্ধ্যা হতে হতে বুঝলাম, দিস ইজ নরমাল। কেউ কিছু মনে করে না। কারণ, বাথরুমে ঢুকলে যতটুকু কাপড় খুলতে হয়, তার চেয়ে সামান্য পরিমাণ কাপড়ই এরা নরমাল পরে থাকে।
রাতে তবুও আমার সাহসে কুলাল না। আমি তাদেরকে রিকোয়েস্ট করলাম, যদি শাওয়ার অন্য কোন অপশন থাকে আমাকে ব্যবস্থা করে দাও। রিসিপশনের মেয়েটা হাসিমুখে নিয়ে গেল উপরের ওয়াশরুমে। এই সিটগুলো ফিলাপ, জাস্ট অন রিকোয়েস্টে আমাকে শাওয়ারের অনুমতি দিয়েছে।
এখানে অবশ্য ওয়াশরুমের সংখ্যা বেশি, ৬ টা। তাও পাতলা টিস্যু পেপারের মত বোর্ড দিয়ে বানানো। আমি শাওয়ার নিচ্ছি, পাশের টয়লেটে শুনি একজন ওয়াক, আওয়াক, কুওয়াক আওয়াজ করছে আর শাওয়ার নিচ্ছে। আমার কেন যেন সন্দেহ হল।
নিজে নিজেই জিজ্ঞাসা করার মত উঁচু স্বরে বললাম, ভাই বাংলাদেশী নাকি?
— হ ভাই, হ। কেমনে বুঝলেন?
ভাই, দুনিয়ার কোন জাতি সম্ভবত বাথরুমে এই সাউন্ড করে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *