ভারতবর্ষ ভ্রমণ: রাজস্থান (জয়পুর)

গুজরাটে থাকতেই MMT তে ডিসকাউন্ট অফারে 991 রুপী দিয়ে জয়পুরের হোটেল বুকিং দিয়েছি। কলকাতার হোটেল রেইটের উপর ডিপেন্ড করে মনে মনে ভেবে রেখেছি মোটামুটি রাত কাটাতে পারব এমন হোটেলই হবে হয়তো।
দীর্ঘ ১৭ ঘন্টা ট্রেন জার্নি শেষে গুজরাটের গান্ধীধাম হতে যখন রাজস্থানের জয়পুর শহরে পৌঁছাই, তখন ভোরের আলো মাত্র ফুটছে। হোটেল টু স্টেশন কার সার্ভিস ফ্রি ছিল বিধায় ওদেরকে স্টেশনে পৌঁছেই ফোন দিয়ে রেখেছি। তবে, গাড়িতে উঠলাম আর নামলাম- ২ মিনিটের রাস্তাতেই হোটেল।

রিসিপশানে ঢুকেই ধাক্কার মত লাগল। ওয়েটিং রুমে সব ফরেইন টুরিস্ট। পূর্বের ধারণা বাতিল করতেই হল, ভালই হোটেল। রিসিপশনিস্ট ম্যানেজারের হাতে পাসপোর্ট দিতেই পাশের জনকে হিন্দিতে বলল, হাবভাবে মনে হয়েছিল লন্ডন থেকে এসেছে, এ যে দেখি বাংলাদেশী!

এন্ট্রি করার পর রুমে যাওয়ার আগ মূহুর্তে সেই ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে বললাম, এখানে কি বাংলাদেশীরা মাগনা থাকে?
– নো স্যার।
– বাংলাদেশী কি এলাউ না?
– এলাউ স্যার।
– সো হোয়াই ইউ টিজ মি? তোমার মালিককে ডাক, তোমার নামে আমি কমপ্লেইন দিলাম।
এরপর ছেলেটার কাঁদাকাটি অবস্থা। স্যার, স্যার, সরি স্যার, হেন তেন। শালার পুত!

যাই হোক, তাঁদের এত টাঁটবাট কেন কিছুক্ষণ পর বুঝলাম। ফ্রি বুফে ব্রেকফাস্ট, ওয়াইফাই, ফ্রি ওয়াটার সার্ভিস, বিশাল আধুনিক রুম, বিশাল বাথরুম, ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা- সব মিলিয়ে থ্রি স্টার হোটেল নিঃসন্দেহে বলা যায়।

পরদিন সকালে ট্যুর কোম্পানিদের কাছ থেকে টিকেট নিয়ে যখন বাসের জন্য হোটেলের সামনে ওয়েট করছিলাম, হৈ হৈ করে ৮/৯ জনের ছেলেমেয়েদের একটি দল সামনে দিয়ে গেল। ততমধ্যে মাথায় ট্রেডিশনাল টুপি করা একটা মেয়ে অবচেতন মনের নেটওয়ার্কে ধরা খেল।

আশ্চর্যের ব্যাপার, সেই দলটির সাথেই আমার আজকের যাত্রা! মনে মনে ভাবলাম, কুচ কুচ হোতা হ্যায়।

তারা অনর্গল হিন্দি, বাঙলা, ইংরেজীতে কথার ফুলঝুরিতে ঢেউ আছড়াচ্ছে। আমি বেচারা একলা। জানালা দিয়ে জয়পুর দেখি আর মাঝে মাঝে সামনের সিটের টুপি দেখি।

বিড়ালা মন্দির দেখা শেষ করে যখন মিউজিয়ামে ঢুকতে যাব, তখনই বুদ্ধিটা মাথায় চাপল। মেয়েটির কাছে গিয়ে আস্তে বললাম, আমি তো বাংলাদেশী, আমার টিকেটের প্রাইজ বেশি। আপনাদের সাথে কি আমার জন্য একটা টিকেট নেবেন, দয়া করে?

এভাবেই শর্মিষ্ঠার সাথে আমার পরিচয়। সে কলকাতার মেয়ে। মেঘালয়ের শিলং নেহু ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি করছে। তারা ভার্সিটি থেকে একটি ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে এসেছিল রাজস্থানে। এই সুযোগে গ্রুপ ট্যুর।

সময়টা দ্রুতই কেটে গেল। মিউজিয়াম, পিংক সিটি, জন্তরমন্তর, আম্বার ফোর্ট, জল মহল দেখতে দেখতে কখন যে সন্ধ্যা হয়ে গেল! দুপুরে খেতে গিয়ে যখন পাঞ্জাবী থালা দেখে না খেয়ে হোটেল থেকে বের হয়ে ফ্রুট কিনে খেয়েছি, বান্ধবীর ব্যথিত আক্ষেপ দেখে ভাবছিলাম, এভাবে কয়েকমাস না খেয়ে থাকলেও কি এসে যায়! এমন রুপবতী একজন নারী যদি আমার জন্য আক্ষেপ করে, প্রয়োজনে সাহারা মরুভূমি পায়ে হেঁটে পার হবো!।

আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব প্রমাণ পেয়ে বিদায় বেলায় আর ছেড়ে যেতেই ইচ্ছে করছে না একে অপরকে। ফোন নাম্বার/ইমেইল বিনিময় হল ঠিকই, কিন্তু তাঁর ফোনের সমস্যার কারণে বন্ধ।

গোসলটা শেষ করতেই দেখি বান্ধবীর ছোট একটা মেইল।
Hi ..I can’t able to send u any messages in what’sapp, if possible u can contact in reception I’m staying in sai kripa hotel. c u in evening hope u will get this mail at time.

ভাগ্য সহায় হলে যা হয় আরকি! আবার বেরিয়ে পড়লাম দুজনে, রাজস্থানী টমটমে করে তার মোবাইল ঠিক করাতে। চামে আমার মোবাইলটাও মুড়িয়ে নিলাম বিশাল মোবাইল শপ থেকে।

সেদিন ভোর রাতেই বাসে দিল্লী যাব। বান্ধবীকে আল-বিদা জানানো ছাড়া বিকল্প নেই।
আল-বিদা শর্মিষ্ঠা, আল-বিদা পিংক সিটি জয়পুর।

1 thoughts on “ভারতবর্ষ ভ্রমণ: রাজস্থান (জয়পুর)

  1. דירות דיסקרטיות בבת ים says:

    מצוין פוסט בבלוג. אני בהחלט מעריך אתר זה. מקל עם זה!
    פוסט נחמד . אני לומד משהו חדש ומאתגר על אתרים אני מעד על כל יום. זה תמיד יהיה מועיל לקרוא מאמרים מאחרים סופרים ולתרגל משהו שלהם אתרים .

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *